মুক্তমনা ওয়েবসাইট টা কি আসলেই মুক্তচিন্তার ধারক বাহক ?

1

বাংলাদেশের নাস্তিকদের প্রিয় ওয়েবসাইট মুক্তমনার নাম তো আমরা সবাই জানি। এই মুক্তমনা ওয়েবসাইট টি সারা পৃথিবীর বড় বড় ঐতিহাসিকদের ইতিহাস কে পাশ কাটিয়ে চরম মুসলিম বিদ্বেষী কিছু ৩য় শ্রেণীর ঐতিহাসিকদের রেফারেন্স দিয়ে সর্বদা প্রমান করতে ব্যস্ত যে উসমানীয় খলিফারা, ভারতবর্ষের মুসলিম সুলতানরা নাকি তাদের লাখ লাখ অমুসলিম প্রজাকে হত্যা করেছে। আচ্ছা আসলেই কি উসমানীয় খলিফারা বা ভারতবর্ষের মুসলিম সুলতানরা তাদের লাখ লাখ অমুসলিম প্রজাকে হত্যা করেছে কি না তা আমরা একটু ইতিহাস থেকেই ঘুরে দেখি।

১৪৯২ সাল, ২রা জানুয়ারী

রাজা ফার্ডিনান্ড ও রানী ইসাবেলার নেতৃত্বে গ্রানাডার পতনের মাধ্যমে স্পেনে মুসলিম শাসনের অবসান ঘটে। এর পরের ইতিহাসটা খুব করুন। লাখ লাখ স্পেনের মুসলমানদের কে হত্যা করা হয়। আর যে সকল মুসলমান বেঁচে ছিল তাদের কে খ্রিষ্টানরা দাস দাসি বানিয়ে আমেরিকা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিক্রি করে দেয়। আর অল্প কিছু ভাগ্যবান স্পেনীয় মুসলমান জাহাজে করে মরক্কোতে পালিয়ে যেতে সমর্থ হয়। যেই স্পেন মুসলমানরা একটানা ৭০০ বছর শাসন করেছিল, স্পেনের জনসংখ্যার শতকরা ৯০ ভাগই ছিল মুসলমান, সেই স্পেনে আজ একজনও স্পেনীয় মুসলমান পাওয়া যায় না। কর্ডোভা গ্রানাডার মসজিদ গুলিতে সেই ১৪০০ সালের পর থেকে আর কোনদিন আযানের ধ্বনি শুনা যায় নি। কিন্তু হাজার বছরের অনেক প্রাচীন গীর্জা কিন্তু এখনো স্পেনে আছে। ৭১২ খ্রিষ্টাব্দে তারিক বিন যিয়াদ যখন স্পেন জয় করেন এরপর থেকে মুসলমানরা একটানা ৭০০ বছর স্পেন শাসন করেন। মুসলমানরা স্পেনে আসার আগে স্পেনের ইহুদীরা খুব কষ্টে ছিল। স্পেনের মুসলমান সুলতানরাই ইহুদীদের কে খ্রিষ্টানদের নির্যাতনের হাত থেকে বাচায়। পৃথিবীর কোন ঐতিহাসিক দেখাতে পারবে না যে স্পেনের মুসলিম শাসনামলে একটি খ্রিষ্টানকেও মুসলমানরা হত্যা করেছে।

এখন আমরা একটু পূর্ব ইউরোপের দিকে যাই। ১৩০০ সালের দিকে যখন উসমানীয় খিলাফত যেটাকে ইংরেজীতে বলা হয় Ottoman Empire আমাদের সেই মহান তুর্কী খলিফারা যখন পূর্ব ইউরোপের বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরী, গ্রীস, অস্ট্রিয়া, পোল্যান্ড, সাবেক যুগশ্লোভিয়া বা বর্তমানের বসনিয়া হার্জগোবিনা, কসোভা, মেসিডনিয়া, ক্রোশিয়া, এই দেশ গুলি জয় করেছিল তখন আমাদের সেই মহান উসমানীয় খলিফারা পূর্ব ইউরোপের একটা খ্রিষ্টান নাগরিক কেও হত্যা করেন নি, কোন গীর্জাও জ্বালিয়ে দেন নি আর কোন খ্রিষ্টানকে দাস দাসি বানানো তো দূরের কথা। আমার এই কথা বিশ্বাস না হলে আপনি নেটে search দিয়ে পূর্ব ইউরোপের এই দেশগুলি বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরী, গ্রীস, অস্ট্রিয়া, পোল্যান্ড, ক্রোশিয়া তে কতভাগ মুসলমান আছে আর কত ভাগ খ্রিষ্টান আছে এই পরিসংখ্যান টা দেখুন। পূর্ব ইউরোপের আলবেনীয়া দেশ টি ছাড়া বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরী, গ্রীস, অস্ট্রিয়া, পোল্যান্ডে মুসলমানদের সংখ্যা শতকরা ১০ ভাগেরও কম। উসমানীয় খলিফারা এই পূর্ব ইউরোপের দেশ গুলিতে তেমন কোন মসজিদও বানান নি। কিন্তু শত শত প্রাচীন গির্জা এই পূর্ব ইউরোপের দেশ গুলিতে এখনো বিদ্যমান আছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগ পর্যন্ত এই পূর্ব ইউরোপের দেশ গুলি উসমানীয় খলিফাদের অধীনে ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্ক হারার পর ১৯১৪ সালের দিকে এই পূর্ব ইউরোপের দেশ গুলি স্বাধীন হয়ে যায়। সেই ১৩০০ সালের দিকে পূর্ব ইউরোপের দেশ গুলিতে খ্রিষ্টানদের সংখ্যা ছিল শতকরা ১০০ ভাগের মত আর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯১৪ সালের দিকেও এই পূর্ব ইউরোপের দেশ গুলিতে খ্রিষ্টানদের সংখ্যা ছিল শতকরা ৯০ ভাগের মত। উসমানীয় খিলাফতের এই ৫৫০ বছরের শাসনামলে এই পূর্ব ইউরোপের দেশ গুলিতে শতকরা মাত্র ১০ ভাগের মত মুসলমান হয়েছিল। কিন্তু স্পেনের সেই মুসলিম নিধনের ইতিহাস কিন্তু আমাদের মহান তুর্কী খলিফারা জানত। তুর্কী খলিফারা চাইলেই কিন্তু পারত পূর্ব ইউরোপের সকল খ্রিষ্টান কে হত্যা করতে। রাজা ফার্ডিনান্ড ও রানী ইসাবেলার প্রথা যদি আমাদের মহান তুর্কী খলিফারা অনুসরন করত তাইলে হয়ত আজ এই বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরী, গ্রীস, অস্ট্রিয়া, পোল্যান্ডে কোন খ্রিষ্টানই খুজে পাওয়া যেত না ঠিক যেমন বর্তমানে স্পেনে কোন মুসলমান খুজে পাওয়া যায় না।

১২৫৮ সালে চেঙ্গিস খানের পুত্র হালাকু খান যখন বাগদাদ ধ্বংস করে তখন হালাকু খান বাগদাদের লাখ লাখ মুসলমান কে হত্যা করে, সর্বশেষ আব্বাসীয় খলিফা আল মুস্তাসিম কে হত্যা করে, বাগদাদের জাতীয় লাইব্রেরির লাখ লাখ বই গুলাকে ফোরাত নদীতে ফেলে দেয়। বাগদাদের ফোরাত নদীর তীর তখন মুসলমানদের রক্তে লাল হয়ে গিয়েছিল। মঙ্গোলিয়দের বর্বরতা সারা পৃথিবী জানে। এখন যদি আমরা ভারত বর্ষের দিকে যাই তাইলে দেখি ১১৭৫ সালে যখন মুহাম্মদ ঘুরী প্রথম ভারত জয় করেন তখন উনি কোন হিন্দুকেও হত্যাও করেন নি, কোন হিন্দুদের মন্দির আগুন দিয়ে পুড়িয়েও দেন নি। মুসলমানরা একটানা ৮০০ বছর ভারত শাসন করেছে। মুসলমানরা যদি চাইত তাইলে আজ ভারতে একটা হিন্দুও থাকত না।

ভারতের অনেক প্রাচীন মন্দির এখনো আছে। আমাদের মহান ভারতবর্ষের মুসলিম সুলতানরা যদি হিন্দু হত্যা করার মন মানসিকতা পোষণ করলে এই মহারাষ্ট্র, কেরালা, কেদাখন্ডে আর কোন প্রাচীন মন্দির খুজে পাওয়া যেত না। মুসলমানরা এই ভারত জয় করার পূর্বে এই ভারতবর্ষে শতকরা ১০০ ভাগই হিন্দু ছিল। আর ৮০০ বছর একটানা শাসন করার পর ১৮৫৭ সালের পর এই ভারতবর্ষে মুসলমানদের সংখ্যা হয় শতকরা মাত্র ২০ ভাগ। কিন্তু রাজা ফার্ডিনান্ড ও রানী ইসাবেলা স্পেনের মুসলমানদের সাথে যা করেছে সেই প্রথা যদি ভারতবর্ষের এই মহান মুসলিম সুলতানরা হিন্দুদের উপর প্রয়োগ করত তাইলে আজ ভারতে একটা হিন্দুও থাকত না। ঠিক যেরকম বর্তমান স্পেনে আর কোন স্পেনীয় মুসলমান খুজে পাওয়া যায় না।

মধ্যযুগে একটা দেশ জয় করার পর গনহারে সেই পরাজিত দেশের নাগরিকদের কে হত্যা করা হত, মুসলমান সুলতানরা সেই মধ্যযুগীয় প্রথা অনুসরণ করলে আজকে পৃথিবীতে আমরা আরো অনেক গুলা মুসলিম রাষ্ট্র পেতাম।

এখন ইসলাম বিদ্বেষী কোন ঐতিহাসিক যদি বলে যে উসমানীয় খলিফারা পূর্ব ইউরোপে লাখ লাখ খ্রিষ্টান কে হত্যা করেছে তাইলে ঐ ঐতিহাসিক যে সাম্প্রদায়িক দোষে দুষ্ট ও মিথ্যাবাদী এতে আর কোন সন্দেহ নাই। কারন উসমানীয় খলিফারা যদি পূর্ব ইউরোপে লাখ লাখ খ্রিষ্টান কে হত্যাই করত তাইলে আজকে পূর্ব ইউরোপের জনসংখ্যার শতকরা ৯০ ভাগ খ্রিষ্টান না হয়ে শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমান থাকত। আবার যদি কোন হিন্দুত্ত্ববাদী ঐতিহাসিক বলে ভারতবর্ষের মুসলিম সুলতানরা লাখ লাখ হিন্দুকে হত্যা করেছে তাইলে ঐ হিন্দু ঐতিহাসিকও যে সাম্প্রদায়িকতার দোষে দুষ্ট এতে কোন সন্দেহ নাই কারন ভারতবর্ষের মুসলিম সুলতানরা যদি হিন্দু হত্যা করার মন মানসিকতা পোষণ করত তাইলে এই ভারতবর্ষে মুসলমানের সংখ্যা হত শতকরা ৮০ ভাগ। ভারতবর্ষের মুসলিম সুলতানদের সাথে সবচেয়ে বেশী যুদ্ধ হয়েছে রাজপুত হিন্দুদের। এই রাজপুত হিন্দুরা কিন্তু এখনো ভারতে আছে বিপুল সংখ্যায়। ভারতবর্ষের মুসলিম সুলতানরা প্রতিশোধ পরায়ন হলে এই রাজপুত হিন্দুদের জাতটা সেই ১৬০০ সালেই বিলুপ্ত হয়ে যেত। উসমানীয় খলিফারা ও ভারত বর্ষের সুলতানরা ইসলামী আইন দ্বারা রাজ্য শাসন করেছেন। আর ইসলামী আইনে কখনই কোন অমুসলিম প্রজাকে হত্যা করা তো দুরের কথা দাস দাসিও বানানো যায় না। সাহাবীরা ইরাক ইরান মিশর তুরস্ক জর্ডান সিরিয়া এরকম বিশাল বিশাল দেশ জয় করে ঐসব দেশের পরাজিত কোন নাগরিকদের কেই দাস দাসী বানান নি।

আসলে এই মুক্তমনা ওয়েবসাইটটি যারা চালায় তারা হচ্ছে চরম ইসলাম বিদ্বেষী। তাদের কাছে সকল সমস্যা শুধুমাত্র দ্বীন ইসলাম কে কেন্দ্র করে। বার্মার বৌদ্ধরা যখন হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলমানকে হত্যা করে তখন বৌদ্ধদের কোন হিংস্রতা মুক্তমনাদের চোখে ধরা পরে না, গৌতম বুদ্ধ সব সময়েই মুক্তমনাদের কাছে দেবতূল্য। এই গৌতম বুদ্ধ মাত্র ২ বছর সংসার জীবন যাপন করে তারপর সারা জীবনের জন্য নিজ গৃহত্যাগ করেছিলেন। এরপর তথাকথিত সিদ্ধিলাভ করার পরও গৌতম বুদ্ধ উনার দীর্ঘ ৮০ বছর বয়সে আর কোনদিন উনার স্ত্রী যশোধারা আর পুত্র রাহুলের কোন খোজ খবর নেন নি। যদিও গৌতম বুদ্ধের স্ত্রী যশোধারা অনেকবার গৌতম বুদ্ধকে অনুরোধ করেছিল তার সাথে সংসার করতে। Facebook এ বড় বড় নাস্তিকদের Time Line এ গৌতম বুদ্ধের ছবি ও বাণী দেখা যায়। আপনারাই বলেন যে ব্যক্তি সারাজীবন তার স্ত্রী পুত্রের আর কোন খোজ খবর রাখে নি সে কি কখনো মানব জাতির আদর্শ হতে পারে ? নাস্তিকরা গৌতম বুদ্ধকে এত ভালবাসে কেন জানেন ? কারন বুদ্ধ ধর্মের ভিতরে সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে কোন concept নাই। গৌতম বুদ্ধ নিজেও কোনদিন কখনো এই মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে কিছু বলেন নি। যেহেতু গৌতম বুদ্ধ নিজেও একজন নাস্তিক ছিলেন তাই নাস্তিকদের কাছে এই যে গৌতম বুদ্ধ সারাজীবন উনার স্ত্রী যশোধারা আর পুত্র রাহুলের কোন খোজ খবর নেন নি এটা কোন অপরাধ বলেই গণ্য হয় না। এই মুক্তমনা ওয়েবসাইটটিতে গৌতম বুদ্ধের সব সময় উচ্ছসিত প্রশংসা করা হয়। কিন্তু এই গৌতম বুদ্ধ যে সারাজীবন উনার স্ত্রী যশোধারা আর পুত্র রাহুলের কোন খোজ খবর নেয় নি এটা মুক্তমনাদের কাজে কোন অপরাধই নয়।

শুধু গৌতম বুদ্ধের কথা বলা ভুল হবে। অহিংসা পরম ধর্মের প্রবক্তা এই মহাত্মা গান্ধীর ব্যক্তিগত চরিত্রও ছিল খুব বাজে। মধ্য বয়সে এসে মহাত্মা গান্ধীর সাথে উনার স্ত্রী কস্তুরবা গান্ধীর আর কোন সম্পর্ক ছিল না, এই মহাত্মা গান্ধী অষ্টাদশী তরুণীদের সাথে একসাথে বিছানায় ঘুমাইতেন, এমনকি মহাত্মা গান্ধী উভকামিও ছিলেন। মহাত্মা গান্ধীর এই কুরুচীপূর্ন চরিত্রের কারনে মহাত্মা গান্ধীর সাথে আর উনার স্ত্রী কস্তুরবা গান্ধী ও ছেলে মেয়ের কোন সম্পর্ক ছিল না। [ তথ্যসূত্রঃ Freedom at Midnight, Writter: Larry Collins and Dominique Lapierre ] নাস্তিকদের কাছে এই মহাত্মা গান্ধীও কিন্তু খুব প্রিয় একজন ব্যক্তি। কিন্তু নাস্তিকরা কোনদিনও এই মহাত্মা গান্ধীর ব্যক্তিগত কুরুচীপূর্ণ চরিত্র নিয়ে একটা ব্লগও লিখল না। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেন বহু বিবাহ করেছেন এটাই সারাদিন মুক্তমনাদের প্রশ্ন। আপনারা দেখবেন নাস্তিকরা প্রায়ই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র বৈবাহিক জীবন নিয়ে অনেক আজে বাজে কথা বলে। মুক্তমনা ওয়েবসাইটটির মূল কাজটিই হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র বৈবাহিক জীবন নিয়ে কুৎসা রটানো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র বৈবাহিক জীবন নিয়ে অনেক আজে বাজে কথা বলে এই মুক্তমনা ওয়েবসাইট টি আর কুলাঙ্গার নাস্তিকরা শার্টপ্যান্ট পড়া কম জানা মুসলমানদের কে বিভ্রান্ত করছে।

আমাদের সমাজের অর্ধেক অংশই হল নারী। হাদীস সংরক্ষন ও দ্বীনের ইলম শিক্ষার উদ্দেশ্যে ৭০ জন পুরুষ সাহাবী সার্বক্ষনিক ভাবে মসজিদে নব্বীতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে থাকতেন। উনাদের কেই আসহাবে সুফফা বলা হত। কিন্তু এই সকল পুরুষ সাহাবীর পক্ষে ইসলামের পর্দা প্রথার কারনে সম্পর্কহীনা নারীদের মাঝে দ্বীন ইসলাম প্রচার করা সম্ভব ছিল না। যেহেতু মাদানী জীবনে ইসলামের প্রচুর বিধিবিধান নাযিল হয়েছিল তাই নারী সমাজের নিকট দ্বীন ইসলাম প্রচারের জন্যও অনুরুপ একদল মহিলা সাহাবীরও প্রয়োজন ছিল যাদেরকে সার্বক্ষনিক ভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহচর্যে থেকে দ্বীন ইসলাম শিখে নারী সমাজের নিকট প্রচার করার প্রয়োজনীয়তা ছিল। মেয়েদের এই মেয়েলী মাসলা গুলি মেয়েদের মাধ্যমেই আসা সম্ভব ছিল। পুরুষ সাহাবীদের মাধ্যমে এই মেয়েলী মাসলা গুলি আসা কখনই সম্ভব ছিল না আর এটা শোভনও ছিল না। আর মেয়েদের এই মাসলা গুলি বেশির ভাগ মাদানী জীবনেই নাযিল হয়েছিল। তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বেশির ভাগ বিয়েই উনার মাদানী জীবনে সংঘটিত হয়েছিল।

আমরা জানি যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সকল কন্যাদের মধ্যে একমাত্র ফাতেমা রাযিয়াল্লাহু আনহা ছাড়া আর সকল কন্যাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবিত থাকা অবস্থায় মারা গেছেন। আবার ফাতেমা রাযিয়াল্লাহু আনহা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যুর ৬ মাস পরেই মারা যান। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রী উম্মুল মুমেনীনরা (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রীদের কে উম্মুল মুমেনীন বা মুমিনদের মাতা বলা হয়) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যুর অনেকদিন পরও বেচে ছিলেন। হযরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যুর পর প্রায় ৫০ বছর বেঁচে ছিলেন। খোদ আয়েশা রাযিয়াল্লহু আনহা ২২১০ টি হাদীস বর্ণনা করেছেন যার মধ্যে মুত্তাফিকুন আলাইহি হচ্ছে ১৭৪ টি । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আরেক স্ত্রী উম্মে সালমা রাযিয়াল্লাহু আনহা ৩৭৮ টি হাদীস বর্ননা করেছেন যার মধ্যে মুত্তাফিকুন আলাইহি হচ্ছে ১৭৪ টি । ইলমে হাদিস প্রচারে হযরত আবু হুরাইয়াহ রাযিয়াল্লাহু আনহুর পরেই হযরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহার স্থান। হযরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহার মাধ্যমে ইসলামের ইলমে হাদিস ফিকাহ শাস্ত্রের ব্যাপক প্রচার হয়। অনেক তাবেঈন সাহাবীরা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রী/উম্মুল মুমেনিনদের কাছে কোন মাসলা জিজ্ঞাস করতে লজ্জা পেত তখন উম্মুল মুমেনীনরা ঐ সাহাবী, তাবেঈনদের কে বলত- “ তুমি ছোটবেলায় তোমার মার কাছে কোন কিছু জিজ্ঞাস করতে যেমন কোন লজ্জা পেতে না ঠিক তেমনি তুমি এখন নিঃসংকোচ ভাবে আমাকে তোমার মা মনে করে তোমার যে কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাস করতে পারো। ” সুবহানাল্লাহ!

সেই যুগে আরবের একজন সাধারন ব্যক্তির গৃহেও ৪-৫ টা দাসী ছিল। রাস্তাঘাটে গরু ছাগলের মত দাস-দাসী কেনা বেচা হত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিন্তু চাইলেই পারতেন বিয়ে না করেও উনার ইচ্ছামত ৪-৫ টা দাসী ঘরে রাখতে। সেই যুগে আরবে এটা খুব সাধারন একটা ব্যাপার ছিল। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বৈবাহিক জীবনের মাধ্যমে সমাজের দাসী প্রথাকে বিলুপ্ত করে উম্মত কে বৈবাহিক প্রথার দিকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নির্দেশে ও উৎসাহে অনেক সাহাবীও উনাদের অধীনস্থ দাসীদের কে মুক্ত করে দিয়ে বিয়ে করে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছিলেন।

এখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি এই মেয়েদের এই মাসলা গুলি প্রচার করার লক্ষ্যে বৈবাহিক সম্পর্কহীনা ২/৪ জন স্ত্রীলোক কে উনার সাথে রাখতেন নাউযুবিল্লাহ তাইলে এর পথ ধরে মুসলিম সমাজের মাঝেও হিন্দুদের মন্দিরের মত সেবাদাসী প্রথা বা খ্রিষ্টানদের গীর্জার মত সন্নাসিনী বা Nun প্রথা চালু হয়ে যেত এবং যার পথ ধরে মুসলিম সমাজের ভিতর অনেক অনৈতিকতার পথ উন্মুক্ত হতে পারতো এবং ইসলামের ভিতর পর্দা প্রথা টি ধ্বংস হয়ে যেত। আর তাই একমাত্র উনার স্ত্রীদের মাধ্যমেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের কাছে এই মেয়েলী মাসলা গুলি পৌছিয়ে দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি বৈবাহিক সম্পর্কবিহীন একটি মেয়েদের জামাত কে সার্বক্ষনিক ভাবে উনার সাথে রাখতেন নাউযুবিল্লাহ তাইলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নাস্তিকদের কাছে খুবই চরিত্রবান ব্যক্তিতে পরিনত হয়ে যেতেন। তাই যারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বহু বিবাহ নিয়ে অশ্লীল কথা বলে তারা আসলে চেয়েছিল ইসলামের ভিতরেও যেন মন্দিরের সেবাদাসী প্রথা বা গীর্জার সন্ন্যাসিনী বা Nun প্রথা চালু হোক। যেহেতু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পবিত্র বৈবাহিক জীবনের কারনে ইসলামের ভিতর কখনই কোন ভাবেই মন্দিরের সেবাদাসী প্রথা বা গীর্জার সন্ন্যাসিনী বা Nun প্রথা চালু হতে পারবেনা তাই ইসলাম বিদ্বেষীদের এখন যত রাগ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পবিত্র বৈবাহিক জীবনের উপর।

এই মুক্তমনা ওয়েবসাইটটির মালিক অভিজিৎ রায় আজ পর্যন্ত হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধে একটা ব্লগও লিখে নাই। এই মুক্তমনাদের চোখে সকল দোষ খালি দ্বীন ইসলামের প্রতি। ১৬০০ সালের দিকে পর্তুগীজ জলদস্যুরা ও মগরা বাংলার দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চল অর্থ্যাৎ খুলনা বরিশাল ও চট্রগ্রামের উপকূলবর্তী এলাকার গ্রাম গুলিতে বসবাসরত নিরীহ বাঙ্গালীদের কে অপহরন করে তারপর দাস দাসী বানিয়ে বিভিন্ন দেশে বিক্রি করে দিত। এই ভাস্কো ডা গামা উনিও কিন্তু একজন পর্তুগীজ জলদস্যু ছিলেন। পরবর্তীতে শায়েস্তা খান এই পর্তুগীজ জলদস্যুদের ও মগদের দমন করেন। যেই দাস প্রথা মুসলমানরা বিলুপ্ত করেছিল সেই দাস প্রথা কিন্তু এই পর্তুগীজ জলদস্যুরাই আবার পৃথিবীতে চালু করেছিল। কিন্তু মুক্তমনা ব্লগে কোনদিনও এই পর্তুগীজ জলদস্যুদের ও মগদের সমালোচনা করে কোন ব্লগ লেখা হয় নি। কেন পর্তুগীজ জলদস্যুরা খ্রিষ্টান বলে কি তাদের সাত খুন মাফ ?