নূরের ট্রাকস্ট্যান্ডে মাদক, দেশী অস্ত্র

11/05/2014 13:16

 শিমরাইল ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন নূর হোসেনের মাদক স্পটে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ মাদক ও দেশী অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বিকালে উদ্ধার করা মাদকের মধ্যে রয়েছে ১৮টি বস্তায় ভরা প্রায় ২ হাজার ৮২৪ বোতল ফেনসিডিল, ৯টি বিদেশী মদের বোতল, ৩৭ ক্যান বিয়ার। এছাড়া ২টি ছোরা ও ৩টি রামদাও সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়। সহকারী পুলিশ সুপার মো. জাকারিয়া জানিয়েছেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নূর হোসেনের এই আস্তানায় অভিযান চালানো হয়। নূর হোসেনের অফিসের পেছনের ৫টি দোকানের সার্টার ভেঙে তল্লাশি চালিয়ে এগুলো উদ্ধার করা হয়। পুলিশ নূর হোসেনের সব অবৈধ ব্যবসার দিকে নজরদারি রেখেছেন। পর্যায়ক্রমে আরও অভিযান চালানো হবে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ওই স্থানে কাউন্টার বসিয়ে এসব মাদক বিক্রি করা হতো। ট্রাকভর্তি মাদক এনে সেখানে মজুদ করা হতো। আবার সেখান থেকে সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন মাদক স্পটে সেগুলো খুচরা বিক্রেতাদের মাধ্যমে বিক্রি করা হতো। মাদক বিক্রি থেকে প্রতিদিন নূর হোসেনের কয়েক লাখ টাকার আয় ছিল। আয়ের টাকার একটা অংশ খামে খামে প্রশাসন থেকে শুরু করে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দেয়া হতো। মাদক বিক্রি বাড়ানোর জন্য মাদক স্পটের কাছেই ট্রাক টার্মিনালে দেড় বছর ধরে চলেছে জুয়া, যাত্রা ও অসামাজিক কার্যকলাপ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসব অপকর্মের স্থান পাহারা দিতেন ওপর মহলের নির্দেশে।
১৪ই মে নারায়ণগঞ্জ যাচ্ছেন খালেদা
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ১৪ই মে বুধবার নারায়ণগঞ্জে আসছেন। চাঞ্চল্যকর ৭ খুনের ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারদের সমবেদনা জানাতে তিনি সেখানে যাচ্ছেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বুধবার সকাল ১১টায় গুলশানের বাসা থেকে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে যাত্রা করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তিনি চাঞ্চল্যকর ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের সমবেদনাসহ তাদের সঙ্গে কিছু সময় কাটাবেন। এর আগে, বৃহস্পতিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল নারায়ণগঞ্জ সফর করেন। তারা নিহত আইনজীবী চন্দন সরকার ও নজরুল ইসলামের বাসায় যান।
তারা ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানান। একই সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের পক্ষেও তারা পারিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানান। হান্নান শাহর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি ও মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা।
উল্লেখ্য, গত ২৭শে এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র-২ ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন সরকারসহ ৭ জনকে দিনদুপুরে অপহরণ করা হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় গাজীপুর থেকে অপহৃত নজরুলের গাড়ি উদ্ধার করা হয়। এর পর ৩০শে এপ্রিল দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শীতলক্ষ্যা নদী থেকে অপহৃত ৬ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরের দিন আরও একজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
সমবেদনা জানাতে নিহতদের স্বজনদের
বাড়িতে পেশাজীবী পরিষদের নেতারা
নারায়ণগঞ্জে অপহরণের পর নারকীয় হত্যাকাণ্ডের শিকার আইনজীবী চন্দন সরকার ও কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানিয়েছেন সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের নেতারা। এসময় নেতৃবৃন্দ বলেন, আলোচিত এই অপহরণ, হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। নিহতদের পরিবারের পাশে থাকার অঙ্গীকার করে পেশাজীবী নেতারা আরও বলেন, এক্ষেত্রে কোন রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে তারা আন্দোলন করবেন না বলে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের আশ্বস্ত করেন। বিচারের নামে প্রহসন বন্ধ এবং র‌্যাব বিলুপ্তির দাবিও জানান পেশাজীবী নেতারা।
শুক্রবার বেলা ১১টায় সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি বৃষ্টিধারা এলাকায় এডভোকেট চন্দন সরকারের বাসভবনে যান পেশাজীবী নেতারা। এসময় তারা নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা ডা. বিজয় কুমার পাল, রঞ্জিত দেবনাথ ও মেয়ে ডা. সুস্মিতা সরকারের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় ডা. বিজয় কুমার পাল বলেন, আলোচিত এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক বক্তব্য আমাদের ব্যথিত করে। অ্যাডভোকেট সানাউলাহ মিয়া বলেন, আমরা আইনজীবীরা কর্মসূচি দিলেও তা রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেইনি।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন বলেন, চন্দন সরকার নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই আইনজীবীরা দলমত নির্বিশেষে আন্দোলন চালিয়ে আসছে।
ডা. সুস্মিতা সরকার বলেন, আমার বাবার (চন্দন সরকার) হেল্প পায়নি এমন কেউ নেই। বাবার মৃত্যুটা ছিল আমাদের কাছে আনএকসেপটেড। আমরা শকড। তবে আমরা সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আস্থা রাখতে চাই। এরকম একটা বিচার হওয়া উচিত যাতে কেউ ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে না পারে। আমরা জানি প্রধানমন্ত্রী তার বাবাকে হারিয়েছেন। তিনি জানেন পিতৃহারার বেদনা। তবে বর্তমানে আমরা সন্তোষজনক কিছু পাচ্ছি না। আমরা আসলে কোন সিচ্যুয়েশনে আছি বুঝতে পারছি না।
দুপুর পৌনে ১২টায় সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি মাদরাসা রোড এলাকায় বুকস গার্ডেনে নজরুল ইসলামের বাসায় নজরুলের স্ত্রী-সন্তানদের সমবেদনা জানাতে যান পেশাজীবী নেতারা। সেখানে রুহুল আমিন গাজী বলেন, সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে আমরা এখানে এসেছি। নজরুল ভাই প্যানেল মেয়র এটা বড় কথা নয়। তিনি বাংলাদেশের একজন নাগরিক। তিনি বিনা করাণে হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন। আমরা তার কোন দোষ দেখছি না। এভাবে যদি হত্যাকাণ্ডের স্বীকার হতে হয়, তাহলে মানুষ যাবে কোথায়? আপনারা পত্রপত্রিকায় দেখেছেন, যে ইট দিয়ে ডুবিয়ে রাখা হয়েছে র‌্যাবের অফিসের পাশে একই ইট পাওয়া গেছে। আপনারা অভিযোগে বলেছেন, ৬ কোটি টাকা নিয়ে র‌্যাব এই কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে। আজকে যে সংস্থা এটা করেছে তাদেরকে শুধু ক্লোজ, চাকরিচুত্য করলেই হবে না। তাদের ফাঁসি দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। বিচার করতে হবে। বিচারের নামে প্রহসন বন্ধ করতে হবে। যাতে বাংলার মাটিতে এইভাবে গুম, খুন আর কেউ না করতে পারে। তিনি বলেন, র‌্যাব ধরে নিয়ে গুম করে ফেলবে, হত্যা  করে ফেলবে, পুলিশ ধরে নিয়ে হত্যা করবে- আজকে এই যদি হয় বাংলাদেশের পজিশন, তবে মানুষ যাবে কোথায়? এসময় তিনি র‌্যাব বিলুপ্তির দাবি করেন। বাংলাদেশকে আজকে গুম, হত্যা মাস্তানি, রাহাজানির স্থানে পরিণত করে ফেলা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুরো বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ নিস্তার চেয়েছে। যতদিন পর্যন্ত নজরুলের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে ফাঁসির ব্যবস্থা করা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত নজরুলের পরিবারের পাশে থাকার অঙ্গিকার করেন পেশাজীবী সংগঠনের এ নেতা। সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাতের আগে নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম অবিলম্বে সকল আসামিকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক রুহুল আমিন গাজীর নেতৃত্বে পরিষদের সদস্য সচিব ড্যাবের ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ডিইউজের সভাপতি শওকত মাহমুদ, মহাসচিব এমএ আজিজ, বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল ইসলাম, মো. রফিকুল ইসলাম, ঢাকা বারের সভাপতি মহসিন, ঢাকা বারের নেতা অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, মহাসচিব এমএ আজিজ, কবি সেলিম বালা, শিক্ষক কর্মচারী পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডিন আবদুর রশীদ প্রমুখ প্রতিনিধি দলে ছিলেন। স্থানীয়দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন, ড্যাব নেতা ডা. ফেরদৌস প্রমুখ।
পুলিশের বদলি হওয়া ৭৯ পদে নতুন কর্মকর্তারা আসেননি
জেলা গোয়েন্দা শাখা এবং সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুলা থানার ৭৯ পুলিশ কর্মকর্তাকে বৃহস্পতিবার রাতে বদলির আদেশ হলেও শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের জায়গায় নতুন কর্মকর্তা দেয়া হয়নি। বৃহস্পতিবার তাদের বদলি করা হয় বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন। তিনি জানান, বদলি হওয়াদের মধ্যে রয়েছেন, পরিদর্শক, উপ-পরিদর্শক ও উপ-সহকারী পরিদর্শক। এরই মধ্যে জেলা গোয়েন্দা শাখায় ওসি (প্রশাসন) হিসেবে যোগ দিয়েছেন মাইনুর রেজাকে। সিদ্ধিরগঞ্জের ওসি প্রশাসনের দায়িত্ব পালন করছেন বদলির আদেশ হওয়া ওসি (তদন্ত) আনিছুর রহমান।